কুমিরের কান্না: এক শিক্ষণীয় গল্প
এক গ্রামে একটি বড় নদীর ধারে থাকত এক কুমির। সে ছিল বড়ই চালাক ও ধূর্ত। প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রাণীকে নিজের শিকার বানাতো। তার ভান করার ক্ষমতা এতটাই বেশি ছিল যে, অনেক প্রাণী তাকে বিশ্বাস করে ফাঁদে পড়ে যেত।
একদিন নদীর ধারে একটি হরিণ জল খেতে এলো। কুমির গাছের ছায়ায় শুয়ে ছিল এবং হরিণকে দেখে মনস্থির করল যে আজ তাকে শিকার করবে। হঠাৎ কুমির কান্না করতে শুরু করল। তার কান্নার শব্দ শুনে হরিণটি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
"তুমি কাঁদছো কেন, ভাই কুমির?"
কুমির জবাব দিল,
"আমার হৃদয় খুবই দুঃখী। আমার কোনো বন্ধু নেই। সবাই আমাকে ভয় পায়। আমি একা একা এই নদীতে থাকি। আজ তোকে দেখে মনে হলো তুই আমার প্রকৃত বন্ধু হতে পারিস।"
হরিণটি মায়ায় পড়ে বলল,
"আচ্ছা, আমি তোমার বন্ধু হব। কিন্তু তোমার তো শিকার করার বদনাম আছে। তুমি আমাকে শিকার করবে না তো?"
কুমির কৌশলে উত্তর দিল,
"আর কখনো শিকার করব না। আমি এখন ভালো হতে চাই। তোকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, বন্ধুত্বই জীবনের আসল আনন্দ।"
হরিণটি কুমিরের কথা বিশ্বাস করল এবং তার কাছে এগিয়ে গেল। কিন্তু যতক্ষণে সে বুঝতে পারল যে কুমির তাকে ফাঁদে ফেলেছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কুমির তার বড় মুখ দিয়ে হরিণটিকে চেপে ধরল।
মৃত্যুর মুখে পড়ে হরিণটি বলল,
"তুমি মিথ্যে কান্না করে আমাকে ফাঁদে ফেললে! তোমার এই কান্না আসল নয়, এটা কুমিরের কান্না।"
হরিণের এই কথা শুনে কুমির হেসে বলল,
"ঠিক বলেছো। আমার কান্না কুমিরের কান্না। এভাবেই আমি শিকার করি।"
শিক্ষণীয় বিষয়:
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, প্রতিটি মিষ্টি কথার বা আবেগপূর্ণ প্রকাশের পেছনে সদ্ভাবনা থাকতে পারে না। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে এবং অপরিচিত লোকের উপর অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত নয়।
উপসংহার:
কুমিরের কান্না হলো মিথ্যে আবেগের প্রতীক। আমাদের উচিত সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝা এবং নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিপদ এড়ানো।
Post a Comment